ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন: ২টি কবরস্থানসহ ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন, তলিয়ে গেছে ৫০টি গ্রাম, বেঁধিবাধ হুমকির মূখে

13606679_616824551816219_5411838499745542699_nমো: সাইফুল ইসলাম খোকন, চকরিয়া:

টানা বৃষ্টিতে মাতামুহুরী নদীতে নেমে এসেছে বন্যা।  চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভার নিন্ম এলাক এখন পানিতে তলিযে গেছে। অনেকে জায়গায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। নদীর তীর ভাঙ্গনে সরে আসতে হচ্ছে অনেক ঘর বাড়ি। এত করে আতংকে পড়েছে মানুষ। ভাঙ্গনে কমপক্ষে ১০টি বাড়িঘর ও ২টি কবরস্থান বিলিন হয়ে গেছে। এদিকে নদীর পানির বৃদ্ধির পাওয়ার সাথে সাথে চকরিয়া পৌরসভার পশ্চিম দিগরপানখালী ১নং বেঁড়িবাধ প্রায় বিলিন হয়ে যাচ্ছে। নদীর পাড় ভাংতে শুরু করেছে। ওই এলাকার গনি সিকদার পাড়া মসজিদ এলাকায় অল্প সময়ের মধ্যে মাতামুহুরী রক্ষাবাঁধের পার্শ্বে চলে আসতে পারে ভাঙ্গন। ঈদের বন্ধ হয়ে পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও দেখা মিলছে ওই সব ভাঙ্গন চলাকায়। যে ভাবে ভাংতে শুরু করেছে ওই জায়গায় অল্প সময়ে নদী হয়ে ভেসে যেতে পারে উপকুলীয় চিংড়ি জোনের সকল মৎস্য সম্পদ। এছাড়া ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দিগরপানখালী হিন্দপাড়া (তপন মাষ্টারের বাড়ি) এলাকায় নদী তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘুনিয়ার ২টি কবরস্থানের একটির আংশিক পরিচয় থাকলেও এখন নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকায় নদী রক্ষাবাঁধ যে কোন মুহুতে ভাঙ্গে গিয়ে নদীর সাথে একত্তা হয়ে যেতে পারে। ওই সব এলাকায় দ্রুত উদ্যোগ না নিলে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন স্থানীয় লোকজন। এছাড়া সাহারবিল, পূর্ববড়ভেওলা, বিএমচর, কোনাখালী, কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর ও বমু বিলছড়ি এলাকায় বেশ কটি জায়গায় ব্যাপক হারে নদী ভাঙ্গন দেখা দিযেছে। খোজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বৃষ্টির পানির কারণে খুটাখালী, ডুলাহাজারা, হারবাং, বরইতলী এলাকায়ও বেশীর ভাগ নিন্ম এলাকা এখন পানি তৈ তৈ করছে। চলাচলে অনেক গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনাবৃষ্টির কারণে এখন মানুষ চরম বিপদে দিনতিপাত করছেন।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তার ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘুনিয়া, দিগরপানখালী এলাকায় বেশীর ভাগ নদী ভাঙ্গনে দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহুতে দক্ষিণ ঘুনিয়া এলাকায় নদী রক্ষাবাধ ভেঙ্গে যেতে পারে। এছাড়া সায়রাখালী, উচিতারবিলসহ বেশ কটি গ্রাম এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি আরো বলে সামনে ঈদের দিন থাকায় স্থানীয় গরীব ও দুস্থদের মাঝে ভিজিএফসহ বিভিন্ন অনুদান দেয়ার ফাঁকে ফাঁকে তিনি ওই এলাকা গুলোতে ছুড়ে যাচ্ছেন। নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করতে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি। এদিকে বরইতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জালাল সিকদার জানায়, তার ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়ের জন্য সাইক্লোন সেন্টার কিংবা উচু জায়গায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছেন তিনি। কাকারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন জানায়, তার ইউনিয়নের দক্ষিণ কাকারা ও মাঝের পাড়ি এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়া তার ওয়ার্ড ছাড়াও বেশ কটি ওয়ার্ডের লোকজন এখন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে পৌরসভার কোচপাড়া এলাকার শাহাদত সামি জানায়, মাতামুহুরী নদীতে বন্যার কারণে তার এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধূরী জানায়, বন্যার কারণে পৌরসভার বাটাখালী, কাহারিয়াঘোনা, বিমানবন্দর এলাকা, নামার চিরিঙ্গার বেশ কিছু নিচু জায়গায় ব্যাপক ভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে। পশ্চিম দিগরপানখালী গনিসিকদার পাড়া জামে মসজিদ এলাকা ও দিগরপানখালী হিন্দু পাড়া থেকে শুরু করে কোচপাড়া পর্যন্ত বেশ কটি জায়গায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ভাঙ্গারমুখ হয়ে অলিশাহবাজার বেঁধিবাধ এলাকা ঝুকিতে রয়েছে। এছাগা কোচপাড়ায় ব্যাপক ভাবে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। দ্রুত ভাঙ্গন টেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানায়, টানা বৃষ্ঠিতে চকরিয়া উপজেলা বেশ কিছু এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যত টুকু পারি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ ও ভিজিএফসহ বিভিন্ন অনুদান অব্যহত রাখা হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম বিএ(অনার্স) এমএ, জানায়, বৃষ্টির কারণে যে হারে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম এতে সাধারণ মানুষের ঈদের আমেজ বন্ধ হয়ে গেছে। মাতামুহুরী নদীতে বন্যা ও বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ লোকদের জন্য এ পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়নের তিনি নিজ হাতে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে চাউল বিতরণসহ বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ ও ভাঙ্গন রোধে যতটুকু সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন টেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।##

পাঠকের মতামত: